বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সম্মানিত প্রিয় দেশবাসী। আজ আমরা স্মরণ করছি এমন একজন বীর রাষ্ট্রনায়ককে, যিনি এক অবিস্মরণীয় ইতিহাসের নাম—শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান! শহীদ জিয়া ছিলেন এক অদম্য সাহসের প্রতীক। তার দর্শন ছিল – "আত্মনির্ভরতা, গণতন্ত্র ও জাতীয়তা।"তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের উন্নতি হবে জনগণের শক্তির মাধ্যমে। তিনি বলতেন,"বাংলাদেশের মালিক জনগণ" — আর সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি শুরু করেন মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার সংগ্রাম। ১৯৭১ এর সেই দুঃসময়ে, যখন চারপাশে শুধু নিরবতা আর ভয়, তখন একজন সৈনিক বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন —"আমি মেজর জিয়া বলছি — আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি!"কি অদম্য সাহস! কি অতুলনীয় দেশপ্রেম! এ ঘোষণা শুধু গুলির আওয়াজ ছিল না,এ ছিল লক্ষ শহীদের স্বপ্নের মশাল! কিন্তু, প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতা আসার পর জাতি আবার এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ে প্রবেশ করে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ — এই সময়ে দেশে চালু হয় রক্ষীবাহিনীর দুঃশাসন। রাস্তাঘাটে, ঘরে-বাইরে শুরু হয় সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন। রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা করা হয় ঠান্ডা মাথায় — প্রায় ৪০ হাজার মানুষ শহীদের তালিকাভুক্ত হয় শেখ মুজিবের একদলীয় শাসনের নামে। এই সময়ে দুর্নীতির সাগরে ডুবে যাচ্ছিল বাংলাদেশ।জনগণের শেষ আশাটুকু ও নিভে যাচ্ছিল।
৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধায় মারা যায়, রাস্তার পাশে লাশ পড়ে থাকে — কিন্তু সরকার ব্যস্ত ছিল কেবল নিজের গদি রক্ষায়।
ঠিক সেই সময়ে, ১৯৭৫ সালের পরে, শহীদ জিয়া এই ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশকে টেনে তোলেন।তিনি শুধু একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন না — তিনি ছিলেন জাতির পুনর্জন্ম দাতা। তিনি জাতিকে বলেছিলেন —"তোমার হাতে শক্তি আছে, তোমার ঘামেই গড়বে বাংলাদেশ।"তিনি চালু করেন "কৃষি বিপ্লব"।তিনি বলেন, "কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে।"তিনি বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেন বীজ, সার, প্রযুক্তি। তিনি তৈরি করেন নতুন গ্রামীণ অর্থনীতি। তিনি গড়ে তোলেন "শ্রমিক-উদ্যোক্তা-প্রশাসন" সবাইকে নিয়ে একসাথে দেশ গড়ার আন্দোলন শুরু করেন। শুধু কৃষি নয় —তিনি শুরু করেন শিল্পায়ন। প্রতিষ্ঠা করেন রপ্তানি অঞ্চল (Export Processing Zones) — আনেন বিদেশি বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান। বাংলাদেশের নাম পৌঁছে দেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। তিনি ছিলেন দুঃখিনী মায়ের কান্না মুছে দেওয়া হাত, তিনি ছিলেন ছিন্নমূল যুবকের সামনে আশার প্রদীপ,
তিনি ছিলেন রাজনীতির পটভূমিতে ন্যায়ের অবিচল প্রতীক। বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাঁর কূটনৈতিক দূরদর্শিতা আমাদের পরিচয় এনে দিয়েছিল নতুনভাবে। সৌদি আরবের সাথে গড়ে তোলেন উষ্ণ সম্পর্ক।
নিমগাছ উপহার দিয়ে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেন। আজকের প্রবাসীরা, যারা সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যে ঘাম ঝরিয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন — তাদের এই যাত্রার সূচনালগ্নে ছিলেন শহীদ জিয়া! তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলভোগ করছে বাংলাদেশ আজও।
প্রবাসীদের ঘামে ভিজে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল আছে আজও। তিনি ছিলেন গরীবের আশ্রয়, শ্রমিকের ভরসা, কৃষকের বন্ধু, যুবকের অনুপ্রেরণা।
তিনি বলেছিলেন,"দেশের প্রত্যেকটি মানুষই আমার আপনজন। "তিনি রাজনীতিতে সকল মতাদর্শের মানুষকে আশ্রয় দেন —তাঁর হাত ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আবার মাঠে ফিরে আসে। তিনি মুখে হাসি ফিরিয়ে দেন হতাশ, বিপর্যস্ত মানুষদের মুখে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় —দেশপ্রেমের অপরাধে, সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে, একদল ষড়যন্ত্রকারী একদিন তার বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। কিন্তু ভাইয়েরা,
শহীদ জিয়ার আত্মা অমর। তিনি আজও বেঁচে আছেন কোটি মানুষের ভালোবাসায়, বাংলার প্রতিটি জমিনের কণিকায়। সম্মানিত দেশবাসী, আজ যখন দেশ সংকটে,
যখন আবার ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে — তখন শহীদ জিয়ার মত সাহসী নেতৃত্বের চেতনা আমাদের প্রয়োজন। তাঁর আত্মত্যাগ, তাঁর আদর্শ আমাদের আলোকবর্তিকা।চলো, আমরা শপথ করি — শহীদ জিয়ার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বো।আত্মনির্ভর, সম্মানিত, গর্বিত এক বাংলাদেশ! বাংলাদেশ জিন্দাবাদ! শহীদ জিয়া অমর হোক!